ডেস্ক রিপোর্ট

১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:২৩ অপরাহ্ণ

অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল পাশ করার চেষ্টা হলেই সর্বাত্মক প্রতিরোধ

আপডেট টাইম : সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩ ১১:২৩ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক: অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল’২৩ প্রত্যাহার এবং জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণাসহ স্কপের ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আজ ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বিকাল ৩ টায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিডিয়া কমপ্লেক্স মিলনায়তনে স্কপের আহবানে জাতীয় কনভেনশন অনুষ্টিত হয়।

শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ – স্কপ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন যৌথ ভাবে এই কর্মসূচী পালন করে।

স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক শাহ মো: জাফরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় কনভেনশন পরিচালনা করেন অপর যুগ্ম সমন্বয়ক নুরুল আমিন। বক্তব্য রাখেন শহিদুল্লাহ চৌধুরী, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল কাদের হাওলাদার, রাজেকুজ্জামান রতন, চৌধুরী আশিকুল আলম, সাইফুজ্জামান বাদশা, কামরুল আহসান, আলাউদ্দিন মিয়া, নুর মোহাম্মদ আকন্দ, শামীম আরা, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক প্রকাশ দত্ত, জী-স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক নঈমুল আহসান জুয়েল, বাংলাদেশ ট্যুরিজম ওয়ার্কাস এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের যুগ্ম আহবায়ক খালেকুজ্জামান লিপন, গার্মেন্ট শ্রমিক ও শিল্প রক্ষা মঞ্চের আহবায়ক আবুল হোসেন, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এএএম ফয়েজ হোসেন, সরকারী কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব নোমানুজ্জামান আর আজাদ, বাঙলাদেশ হোটেল ও রেষ্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আক্তারুজ্জামান খান, বাংলাদেশ স-মিলস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক রজত বিশ্বাস, বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার, স্কপ কুষ্টিয়া জেলার হাফিজ সরকার, স্কপ বরিশাল জেলার এ্যাড. এ. কে. আজাদ, স্কপ সিলেট জেলার আবু জাফর, স্কপ রাজশাহী জেলার আলফাজ হোসেন যুবরাজ, স্কপ বগুড়া জেলার সাইফুজ্জামান টুটুর, স্কপ যশোর জেলার মাহাবুবুর রহমান মজনু, স্কপ ময়মনসিংহ জেলার মাহাবুব বিন সাইফ, স্কপ খুলনা জেলার মোসাম্মত ডলি, স্কপ সিরাজগঞ্জ জেলার ইসমাইল হোসেন, স্কপ নারায়ণগঞ্জ জেলার হাফিজুর ইসলাম, উত্তরবঙ্গ হোটেল রেস্তোঁরা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মমিন মন্ডল, ট্যানারী শ্রমিক ইউনিয়নের দপ্তর শেখ আকরাম হোসেন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিক, বাংলাদেশ ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম আক্তার, জাতীয় নির্মাণ শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক পারুল মজুমদার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইব্রাহীম প্রমুখ।

নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ৬ এপ্রিল ২০২৩ বাংলাদেশর জাতীয় সংসদে বা.জা.স বিল নং- ১২/২০২৩ উত্থাপিত হয়েছে। যদিও এই বিলে অত্যাবশ্যক পরিষেবা বলতে ১৮ টি সেক্টরকে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু সাধারনভাবে সকল সেক্টরের শ্রমিকদের মধ্যে আতংক তৈরি হয়েছে যে তাদের উপর কাজের চাপ, নিপীড়ন ও বঞ্চনা আরও বাড়বে কিন্তু প্রতিবাদ করার কোন সুযোগ বা অধিকার থাকবে না। এই বিলে উল্লেখ করা হয়েছে, “আপাত বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলি প্রাধান্য পাইবে।“ ফলে এই বিল আইনে পরিণত হলে শ্রম আইনের উপর এই আইন প্রাধান্য পাবে। অথচ শ্রম আইনে বলা হয়েছে “ এই আইনের অন্যত্র ভিন্নরূপ কিছু নির্ধারিত না থাকিলে, এই আইন সমগ্র বাংলাদেশে প্রযোজ্য হইবে।“ সে কারণে আমাদের আশংকা যে, এই অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল আইনে পরিণত হলে তা শ্রম আইনকে অকার্যকর করে ফেলবে, শ্রম আইনে ধর্মঘটের যতটুকু আইনসংগত অধিকার আছে সেটাও বাস্তবে কেড়ে নেয়া হবে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, এই বিলের প্রারম্ভেই উল্লেখ করা হয়েছে ‘১৯৫২ সালের অ্যাক্ট এবং ১৯৫৮ সালের অর্ডিন্যান্সকে সময়োপযোগী করিয়া কতিপয় চাকরি বা শ্রেণীর চাকরি বা সেবাকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসাবে ঘোষণা, এতদসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণ এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়নকল্পে আনীত বিল’ হিসেবে এই বিল উত্থাপন করা হচ্ছে। আমরা মনে করি পাকিস্থানি পরাধীন আমলে যে আইনের বিরুদ্ধে আমাদের পূর্বসূরিরা আন্দোলন করেছেন আজ স্বাধীন দেশে সেই আইন কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাছাড়া এই বিল ট্রেড ইউনিয়নের গণতান্ত্রিক কর্ম পরিচালনার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এবং এই ভূখন্ডের শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল কেড়ে নেয়ার সামিল। এই বিল আইএলও কনভেনশনের স্বীকৃত ধর্মঘটের মৌলিক অধিকার এবং আন্তর্জাতিক সুপারিশের পরিপন্থী।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বাধ্য না হলে শ্রমিকরা সাধারণত ধর্মঘট করে না, ধর্মঘট করতে চাইলে শ্রম আইনের বিধান মেনে করতে হয় এবং বেআইনি ধর্মঘটের বিরুদ্ধে শ্রম আইনেই শাস্তির ব্যবস্থা আছে তা সত্ত্বেও অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল উত্থাপন সচেতন শ্রমিকদের কাছে বিস্ময়ের উদ্রেক করেছে। তাছাড়া যে সময়ে শ্রমিকরা স্কপের নেতৃত্বে ২০ হাজার টাকা জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণাসহ ৯ দফা দাবি তুলে ধরে তা আদায়ে আন্দোরন গড়ে তুলতে সচেষ্ট সেই সময়ে দেশী বিদেশী শ্রম শোষণকারী মালিক এবং কোম্পানিসমূহ উৎসাহিত করতে আর শ্রমিকদের প্রতিবাদের শেষ হাতিয়ার কে কেড়ে নিতে অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন নামে এই অগণতান্ত্রিক বিল উত্থাপন করা হয়েছে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আমরা সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, শ্রমমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ, জেলা প্রশাসকগণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ, সংসদ অভিমুখে পদযাত্রা ও স্পীকার বরাবর স্মারকলিপি পেশ, শ্রম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বরাবর অনুরোধ পত্র প্রেরণ করে আমাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছি। আমরা সারাদেশে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে প্রতিনিধিসভার মাধ্যমে শ্রমজীবী মানুষের মতামত নিয়ে এসেছি। সেই মতামতের ভিত্তিতে আজকের এই জাতীয় কনভেনশন থেকে ঘোষণা করা হচ্ছে যে অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন ২০২৩ নামের এই বিল পাশের চেষ্টা হলে শ্রমিকদের সর্বাত্মক প্রতিরোধ মোকাবেলা করতে হবে সরকারকে আর শাস্তির ভয় দেখিয়ে স্কপের ৯ দফা আদায়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন বন্ধ করা যাবেনা বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে শ্রমজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে ন্যায্য মজুরি, গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যাক্ত করছে স্কপ।

কনভেনশন থেকে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সকাল ১১ টায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।

শেয়ার করুন